February 5, 2013
20:00 IST
নির্বাচনের পর এই প্রথম মিডিয়ায়
লাইভ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী,
সি পি আই (এম)-এর পলিট বুরো সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২৪ ঘণ্টার এডিটর
ইনপুট অঞ্জন বন্দ্যোপাধায়ের মুখোমুখি।
বাম শাসনের অবসানের পর কেটে গিয়েছে ২০ মাস। ২০১১-র ২০ মে নতুন সরকারের শপথ গ্রহণের পর রাজ্য রাজনীতিও থেমে নেই। পরিবর্তনের ঘোষণা নিয়ে আসা জোট সরকার ভেঙে গিয়েছে। সঙ্গত্যাগ করেছেন সেই সময় সঙ্গে থাকা অনেকেই। রাজনৈতিক চাপান উতর। শাণিত প্রশ্নের মুখোমুখি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
২৪ ঘণ্টা- আপনার মুখে কি দিনের শেষে হাসি ফুটল ২১শে ফেব্রুয়ারির ধর্মঘট না হওয়ায়?
বুদ্ধদেব- হাসি বা দুঃখের ব্যাপার নয়। কংগ্রেস, বি জে পি সব ট্রেড ইউনিয়নগুলো ডেকেছিল। দাবি দাওয়াগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইমুহূর্তে যেই প্রশ্নটা খুব বেশি করে উঠছে তা হল ঠিকা শ্রমিকদের প্রশ্ন। তাদের দাবিদাওয়া মানা হচ্ছে না। কিন্তু ২১শে ফেব্রুয়ারি ধর্মঘটের ক্ষেত্রে কিছু মানুষের মনে হতে পারে তাদের কাছে 'রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি'র গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। ভাষার প্রশ্নে গুরুত্ব না দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা যখন সরকার চালিয়েছি আমরা ট্রেড ইউনিয়নদের বলেছিলাম এ রাজ্যে একদিনের ধর্মঘট হোক। অন্যদিন শিল্প ধর্মঘট হোক। অন্য সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে চলুক। সেইভাবেই একদিন ধর্মঘট হবে।
বাম শাসনের অবসানের পর কেটে গিয়েছে ২০ মাস। ২০১১-র ২০ মে নতুন সরকারের শপথ গ্রহণের পর রাজ্য রাজনীতিও থেমে নেই। পরিবর্তনের ঘোষণা নিয়ে আসা জোট সরকার ভেঙে গিয়েছে। সঙ্গত্যাগ করেছেন সেই সময় সঙ্গে থাকা অনেকেই। রাজনৈতিক চাপান উতর। শাণিত প্রশ্নের মুখোমুখি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
২৪ ঘণ্টা- আপনার মুখে কি দিনের শেষে হাসি ফুটল ২১শে ফেব্রুয়ারির ধর্মঘট না হওয়ায়?
বুদ্ধদেব- হাসি বা দুঃখের ব্যাপার নয়। কংগ্রেস, বি জে পি সব ট্রেড ইউনিয়নগুলো ডেকেছিল। দাবি দাওয়াগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইমুহূর্তে যেই প্রশ্নটা খুব বেশি করে উঠছে তা হল ঠিকা শ্রমিকদের প্রশ্ন। তাদের দাবিদাওয়া মানা হচ্ছে না। কিন্তু ২১শে ফেব্রুয়ারি ধর্মঘটের ক্ষেত্রে কিছু মানুষের মনে হতে পারে তাদের কাছে 'রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি'র গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। ভাষার প্রশ্নে গুরুত্ব না দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা যখন সরকার চালিয়েছি আমরা ট্রেড ইউনিয়নদের বলেছিলাম এ রাজ্যে একদিনের ধর্মঘট হোক। অন্যদিন শিল্প ধর্মঘট হোক। অন্য সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে চলুক। সেইভাবেই একদিন ধর্মঘট হবে।
২৪ ঘণ্টা- ভাষা দিবস কি কোনও কারণ না অজুহাত?
বুদ্ধদেব- এটা কি অজুহাত হতে পারে?
২৪ ঘণ্টা- মানে একদিনের ধর্মঘটের অজুহাত দিয়ে...
বুদ্ধদেব- এটা সর্বভারতীয় সিদ্ধান্ত। দিল্লিতে আমাদের লোকেরাও আছে। আমরাও সিদ্ধান্তের শরিক। যখন ২১শে ফেব্রুয়ারি দিন এগিয়ে আসছে তখন দেখলাম মানুষ আমাদের ভুল ভাবতে পারে।
২৪ ঘণ্টা- আমরা এসএমএস-এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে প্রশ্ন রাখতে বলেছিলাম। এসএমএসে আসা একটি প্রশ্ন বলছে, আপনি যে পথে উন্নয়নের লক্ষ্যে এগোচ্ছেন সেখানে আপনার পথের সঙ্গে আপনার দলের কট্টরপন্থী একটা অংশের বিরোধ আছে..
বুদ্ধদেব- দলের মধ্যে মতপার্থক্য হতেই পারে। আমি রাজ্যে যখন সরকার পরিচালনা করেছি তখনও বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য হয়েছে। এরকম অবস্থায় দলের অধিকাংশ মানুষ যা বলেন সেই সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়।
২৪ ঘণ্টা- আপনার কি মনে হয় আপনি একজন সঠিক মানুষ যিনি ভুল পার্টিতে রয়েছেন?
বুদ্ধদেব- আমি সঠিক পার্টিতে রয়েছি। সেই দলের কিছু ভুল হয়েছে। যেই ভুলগুলো শুধরোতে হবে। আমাদের দলের একটা ঐতিহাসিক অবস্থান রয়েছে। সেই অবস্থান দেখে আমাদের ভুলগুলো চিনতে হবে এবং শুধরোতে হবে। আমি এমন একটা পার্টিতে থাকতে পেরে গর্বিত। আমার পার্টির ঐতিহ্য, ইতিহাস সব কিছু আমাকে উত্সাহিত করে, ভাবায়।
২৪ ঘণ্টা- ক্ষমতায় আসার আগে বামপন্থীদের নিয়ে যে ধারণা ছিল, সেটা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পর আর নেই। কমিউনিস্ট মানেই যে কথাগুলো মানুষ ভাবতে সেই পাঞ্জাবি, ঝোলাব্যাগ। সেসব তো আর নেই!
বুদ্ধদেব- দেখুন দুনিয়াটা পাল্টাচ্ছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই কমিউনিস্টদের মধ্যেও পরিবর্তন হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা আমরা মানুষের সঙ্গে সেদিনও ছিলাম, আজও আছি।
২৪ ঘণ্টা- তাহলে কমিউনিস্টরা কি সঠিক পথেই আছেন?
বুদ্ধদেব- হ্যাঁ।
২৪ ঘণ্টা- আর আমাদের রাজ্য?
বুদ্ধদেব- আমাদের রাজ্য পশ্চাদগতিতে হাঁটছে।
২৪ ঘণ্টা- কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তো বলছেন 'মানুষ ভাল আছেন। পিঠে পুলি খাচ্ছেন, উত্সব করছেন।'
বুদ্ধদেব- রাজ্যে আতঙ্কের পরিবেশ রয়েছে। গ্রাম শহরের মানুষ এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। এর জন্য দায়ী সরকারের মনোভাব আর অপরাধ ঘটার পর মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য। কিছু হয়নি, সাজানো ঘটনা এমন সব কথা বলে অপরাধীদের উত্সাহ দেওয়া হচ্ছে। পুলিস কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। এই তো বারাসতের ঘটনাগুলোর কথাই বলুন না। কী চলছে ওখানে? রোজ রোজ কিছু না কিছু ঘটছে। তার চেয়েও বড় কথা কেউ জোর দিয়ে বলতে পারছেন না কাল থেকে আর কোনও অপরাধ হবে না।
২৪ ঘণ্টা- আপনি ক্ষমতায় থাকাকালীন তো বারাসতে অপরাধ হয়েছে। রাজীব দাসের ঘটনা তো আপনার আমলেরই ঘটনা।
বুদ্ধদেব- কিন্তু সে সময় সরকারের ভুমিকার কথা ভেবে দেখুন। আমরা একবারও ঘটনাটা মিথ্যা বলে অপরাধকে প্রশয় দিইনি। পুলিসের কাছে দ্রুত রিপোর্ট চেয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
২৪ ঘণ্টা- হ্যাঁ ঘটনার পরদিনই আপনি ছুটে গিয়েছিলেন।
বুদ্ধদেব- তার চেয়েও বড় কথা পুলিস দ্রুত রিপোর্ট পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছিল। আর এখন হয় ঠিক উল্টো। মুখ্যমন্ত্রীই বলেন সাজানো ঘটনা। আর এতে অপরাধী, দুষ্কৃতিরা উত্সাহিত হয়।
২৪ ঘণ্টা- কোনও মুখ্যমন্ত্রী কি চাইতে পারেন তার রাজ্যে সমাজবিরোধীরা মাথাচাড়া দিক?
বুদ্ধদেব- সেটা ভেবেই তো অবাক হচ্ছি।
২৪ ঘণ্টা- রাজ্যে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় কোনটা
বুদ্ধদেব--ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত। এখন ছেলেমেয়েরা নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে আতঙ্কিত। জানে চাকরি পেতে হলে এই রাজ্যে কিছু হবে না। সেই ব্যাঙ্গালোর ছুটতে হবে।
বুদ্ধদেব- এটা কি অজুহাত হতে পারে?
২৪ ঘণ্টা- মানে একদিনের ধর্মঘটের অজুহাত দিয়ে...
বুদ্ধদেব- এটা সর্বভারতীয় সিদ্ধান্ত। দিল্লিতে আমাদের লোকেরাও আছে। আমরাও সিদ্ধান্তের শরিক। যখন ২১শে ফেব্রুয়ারি দিন এগিয়ে আসছে তখন দেখলাম মানুষ আমাদের ভুল ভাবতে পারে।
২৪ ঘণ্টা- আমরা এসএমএস-এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে প্রশ্ন রাখতে বলেছিলাম। এসএমএসে আসা একটি প্রশ্ন বলছে, আপনি যে পথে উন্নয়নের লক্ষ্যে এগোচ্ছেন সেখানে আপনার পথের সঙ্গে আপনার দলের কট্টরপন্থী একটা অংশের বিরোধ আছে..
বুদ্ধদেব- দলের মধ্যে মতপার্থক্য হতেই পারে। আমি রাজ্যে যখন সরকার পরিচালনা করেছি তখনও বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য হয়েছে। এরকম অবস্থায় দলের অধিকাংশ মানুষ যা বলেন সেই সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়।
২৪ ঘণ্টা- আপনার কি মনে হয় আপনি একজন সঠিক মানুষ যিনি ভুল পার্টিতে রয়েছেন?
বুদ্ধদেব- আমি সঠিক পার্টিতে রয়েছি। সেই দলের কিছু ভুল হয়েছে। যেই ভুলগুলো শুধরোতে হবে। আমাদের দলের একটা ঐতিহাসিক অবস্থান রয়েছে। সেই অবস্থান দেখে আমাদের ভুলগুলো চিনতে হবে এবং শুধরোতে হবে। আমি এমন একটা পার্টিতে থাকতে পেরে গর্বিত। আমার পার্টির ঐতিহ্য, ইতিহাস সব কিছু আমাকে উত্সাহিত করে, ভাবায়।
২৪ ঘণ্টা- ক্ষমতায় আসার আগে বামপন্থীদের নিয়ে যে ধারণা ছিল, সেটা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পর আর নেই। কমিউনিস্ট মানেই যে কথাগুলো মানুষ ভাবতে সেই পাঞ্জাবি, ঝোলাব্যাগ। সেসব তো আর নেই!
বুদ্ধদেব- দেখুন দুনিয়াটা পাল্টাচ্ছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই কমিউনিস্টদের মধ্যেও পরিবর্তন হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা আমরা মানুষের সঙ্গে সেদিনও ছিলাম, আজও আছি।
২৪ ঘণ্টা- তাহলে কমিউনিস্টরা কি সঠিক পথেই আছেন?
বুদ্ধদেব- হ্যাঁ।
২৪ ঘণ্টা- আর আমাদের রাজ্য?
বুদ্ধদেব- আমাদের রাজ্য পশ্চাদগতিতে হাঁটছে।
২৪ ঘণ্টা- কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তো বলছেন 'মানুষ ভাল আছেন। পিঠে পুলি খাচ্ছেন, উত্সব করছেন।'
বুদ্ধদেব- রাজ্যে আতঙ্কের পরিবেশ রয়েছে। গ্রাম শহরের মানুষ এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। এর জন্য দায়ী সরকারের মনোভাব আর অপরাধ ঘটার পর মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য। কিছু হয়নি, সাজানো ঘটনা এমন সব কথা বলে অপরাধীদের উত্সাহ দেওয়া হচ্ছে। পুলিস কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। এই তো বারাসতের ঘটনাগুলোর কথাই বলুন না। কী চলছে ওখানে? রোজ রোজ কিছু না কিছু ঘটছে। তার চেয়েও বড় কথা কেউ জোর দিয়ে বলতে পারছেন না কাল থেকে আর কোনও অপরাধ হবে না।
২৪ ঘণ্টা- আপনি ক্ষমতায় থাকাকালীন তো বারাসতে অপরাধ হয়েছে। রাজীব দাসের ঘটনা তো আপনার আমলেরই ঘটনা।
বুদ্ধদেব- কিন্তু সে সময় সরকারের ভুমিকার কথা ভেবে দেখুন। আমরা একবারও ঘটনাটা মিথ্যা বলে অপরাধকে প্রশয় দিইনি। পুলিসের কাছে দ্রুত রিপোর্ট চেয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
২৪ ঘণ্টা- হ্যাঁ ঘটনার পরদিনই আপনি ছুটে গিয়েছিলেন।
বুদ্ধদেব- তার চেয়েও বড় কথা পুলিস দ্রুত রিপোর্ট পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছিল। আর এখন হয় ঠিক উল্টো। মুখ্যমন্ত্রীই বলেন সাজানো ঘটনা। আর এতে অপরাধী, দুষ্কৃতিরা উত্সাহিত হয়।
২৪ ঘণ্টা- কোনও মুখ্যমন্ত্রী কি চাইতে পারেন তার রাজ্যে সমাজবিরোধীরা মাথাচাড়া দিক?
বুদ্ধদেব- সেটা ভেবেই তো অবাক হচ্ছি।
২৪ ঘণ্টা- রাজ্যে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় কোনটা
বুদ্ধদেব--ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত। এখন ছেলেমেয়েরা নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে আতঙ্কিত। জানে চাকরি পেতে হলে এই রাজ্যে কিছু হবে না। সেই ব্যাঙ্গালোর ছুটতে হবে।
২৪ ঘণ্টা-- তাহলে বলছেন
কিচ্ছু হচ্ছে না
বুদ্ধদেব- আমরা ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার রাজ্যে কিছু বিনিয়োগ হয়নি। শিল্পপতি মহলে আমাদের রাজ্যকে নিয়ে হাসিহাসি হচ্ছে। বাইরের রাজ্যে এখন আমার ঠাট্টার পাত্র হয়ে যাচ্ছি।
২৪ ঘণ্টা- আপনাদের দল এই প্রশ্নটা তোলেন বলেই মুখ্যমন্ত্রী কর্মসংস্থান তৈরির ওপর জোর দিচ্ছেন?
বুদ্ধদেব- দৈনিক ভিত্তিতে কিছু মানুষকে এটাই যদি চাকরি দেওয়ার পথ হয় তাহলে সর্বনাশ।
২৪ ঘণ্টা- তার মনে আপনি মনে করেন কর্মসংস্থান তৈরি করতে হলে শিল্প ছাড়া পথ নেই?
বুদ্ধদেব- না। উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা কৃষির ভূমিকা কখনই অস্বীকার করতে পারি না। ক্ষমতা আসার প্রথম ১৫-২০ বছর আমরা শুধু কৃষির ওপর জোর দিয়েছি। ১৯৯০-৯২ সালে যখন শিল্প নীতির পরিবর্তন হল তখন আমাদের কাছে সুযোগ এল। সুযোগের পুরোপুরি সদব্যবহার করার জন্য আমাদের নীতি পাল্টানোর প্রয়োজন হল তখন। আমরা বিনিয়োগ আনতেও সফল হয়েছিলাম। ২০০৬ থেকে রাজ্যে সমস্য শুরু হল। তারপর ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১০ এই পাঁচ বছর কি রাজ্যে বিনিয়োগ আসেনি? ২০১০ সালে রাজ্যে ১০,০০০ হাজার কোটির বিনিয়োগ এসেছিল। কৃষির সাফল্য অক্ষুণ্ণ রেখেই আমাদের শিল্প আনতে হবে।
২৪ ঘণ্টা- এখন শিল্পের ক্ষেত্রে সমস্যাটা ঠিক কোথায়?
বুদ্ধদেব- এখন সবথেকে বড় সমস্যা হচ্ছে দিশা অন্ধকার। কেন শিল্প চাই, কীভাবে চাই সেই সম্পর্কে কোনও ধারনা নেই। কলেজ, ইউনিভার্সিটি, পলিটেকনিক, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প বললেই হয় না। রাজ্যে বড় শিল্প না হলে কখনই ছোট শিল্প হবে না। পেট্রোলিয়াম, অটোমোবাইলের মতো বড় শিল্প হলে তবেই ছোট শিল্প আসবে। আর একটা হল নলেজ ইন্ডাস্ট্রি। কৃষির সাফল্যতে আঘাত না দিয়েই সম্মতি আনতে হবে। জমির সঠিক দাম দিতে হবে ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সম্মতি, জমির দাম ও পুনর্বাসন এই তিনটি জিনস একসঙ্গে নিয়েই দিশা ঠিক করতে হবে। বাংলায় দুটোই শিল্প রয়েছে। চারুশিল্প আর ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু নতুন সরকারের কাছে এই দুটোর কোনও পার্থক্য নেই।
২৪ ঘণ্টা- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু বারংবার জমিনীতি ও শিল্পপ্রসঙ্গে সরকারের অবস্থান আলাদা করে দিচ্ছেন...
বুদ্ধদেব- উনি বলছেন কৃষকদের কাছে গিয়ে জমি কিনবেন। কিন্তু কীভাবে কিনবেন? ইন্ডাস্ট্রি করতে চান, কিন্তু কীভাবে জমি কিনবেন সেই বিষয়ে কোনও দিশা নেই। কেন ৪০০ একর দেওয়া যায় না, তা নিয়ে ধারনা নেই। সিঙ্গুরে টাটার সঙ্গে ৫৬টি অ্যান্সিলারি সংস্থা এসেছিল। যারা গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরি করবে। সেই কথা আমি যখন বলতে গেলাম উনি বলেছিলেন ওখানে শুধুই ওয়াইন শপ আর বিউটি পার্লার তৈরি হবে। কিন্তু এই ৫৬টি সংস্থা যে এসেছিল তারা থাকলে কিন্তু টাটার পরেও আরও অনেক সংস্থা আসত। গুজরাটে যেহেতু ইন্ডাস্ট্রি হয়েছে তাই টাটার পরই ফোর্ড চলে এসেছে। আমার এ রাজ্যে শিল্পের জন্য ১০০০ একর জমি লাগলেই কৃষকের কাছে চলে যাব সেটা কখনই হয় না।
২৪ ঘণ্টা- আপনার কি মনে হয় যেহেতু এই জমিনীতি প্রসঙ্গেই আগের সরকারের হাত পুড়েছে তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি অধিগ্রহণের ওপরই বারবার জোর দিচ্ছেন?
বুদ্ধদেব- ঠিক। সেই কারণেই আমরা পরাজিত হয়েছি। সিঙ্গুর থেকে শুরু হয়ে এমন একটা রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি করা হল যেখান থেকে আমাদের পরাজয় হল।
২৪ ঘণ্টা- এই মুহূর্তে আপনি যদি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতেন তাহলে সবকিছু মাথায় রেখে রাজ্যে শিল্প আনতেন?
বুদ্ধদেব- আমি সিঙ্গুরে আর যাব না। কারণ ওখানে অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছে। কোর্ট, আন্দোলন সব মিলিয়ে। কিন্তু অবশ্যই শিল্প আনব। জাহাজ নির্মান শিল্প আমরাই এনেছিলাম। উড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশে, গুজরাটে শিল্প হলে এখানে কেন হবে না। পেট্রোকেমিক্যালস ইন্ডাস্ট্রি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমি আরও অনেক সতর্ক ভাবে কাজ করব। বড়জোড়া, রঘুনাথপুর, নৈহাটি, পানাগড়ে ৪০০০ একর জমি মানুষ স্বেচ্ছায় দিয়েছে।
২৪ ঘণ্টা- এখন যদি ২০০৬ সালের ফিরে যান তাহলে কি সিঙ্গুর মডেল ছিঁড়ে ফেলে দেবেন?
বুদ্ধদেব- না। আমি সতর্ক ভাবে কাজ করব। এখন সারা দেশে সঙ্কট। আমাদের দেশের জিডিপিও ৮ থেকে ৫-এ নেমে এসেছে। উড়িষ্যা, অন্ধ্র, গুজরাট এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলায় হবে না কেন। সিঙ্গুরে আমি ৮৫% শতাংশ কাজ করে ফেলেছিলাম। সিঙ্গুর কৃষি থেকে কী লাভ করছে? শিল্প হলে কতটা লাভ করত? সবটাই আমরা হিসেব করে এগিয়েছিলাম। এবারেও সেভাবেই সেগুলো মাথায় রেখেই কৃষি থেকে শিল্পে রূপান্তেরর পথে হাঁটব।
২৪ ঘণ্টা- এখন সিঙ্গুরে যা পরিস্থিতি যে সিঙ্গুর কাঁদছে। আপনি কি বলবেন সিঙ্গুর কাঁদলে আপনার দায় নেই? অনেকেই মনে করেন আপনি তো শিল্প আনতে চেয়েছিলে। তাহলে সেই সেই আন্দোলনের পর আপনি কেন কঠোর হলেন না? মানুষের কল্যাণের খাতিরে কি আপনার কঠোর হওয়া প্রয়োজন ছিল না?
বুদ্ধদেব- আমি শুনেছি। পুরোটার একটা ঘটনা পরম্পরা রয়েছে। আমি বহুবার তৃণমূলকে সিঙ্গুরে ঢুকতে দিইনি। ডানকুনি থেকেই ফিরিয়ে দিয়েছি। তারই ফলস্বরূপ কেন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না এই কারণে বিধানসভায় লন্ডভন্ড হয়ে গেল। হাতে সংবিধান নিয়ে বিধানসভায় লন্ডভন্ড চলল। এটা তো ইতিহাস। আমি ভেবেছিলাম সিঙ্গুরে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ কাজ করে ফেলেছি বাকিটা হয়ে যাবে। কিন্তু মাঝখানে নন্দীগ্রাম ঘটে গেল। আমরা পরিষ্কার বলেছিলাম জমি নেব না। তাও নন্দীগ্রাম ভয়ঙ্কর আকার নিল। মাওবাদীরা ছিল বলেই এত ভয়ঙ্কর আকার নিতে পেরেছিল। পরিস্থিতি আরও জটিল হতে থাকল। আমি টাটাকে বললাম। উনি বলেছিলেন পরোয়া করেন না। কারখানা হলে ৪০০০ থেকে ১০,০০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু শেষের দিকে বিক্ষোভ যখন আরও বড় আকার নিল তখন টাটা পাল্টি খেল। উনি আমাকে বললেন এই অবস্থায় থাকলে শিল্প সম্ভব নয়। আমি বললাম আপনাকে কথা দিয়েছি যখন কারখানা হবেই। কিন্তু টাটার সাহস ছিল না। হঠাত্ শারদীয়া উত্সবের আগে টাটা সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিলেন। আমি শক্ত হাতে ওনাকে নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেম। কিন্তু উনি আমাকে বলেছিলেন আমি 'আনওয়ান্টেড গেস্ট', অবাঞ্ছিত অতিথি হিসেবে থাকতে চাই না।
২৪ ঘণ্টা- আবার সেই অবস্থায় ফিরে যান তাহলে অবস্থান মঞ্চ হতে দেবেন?
বুদ্ধদেব- যদি ভাবেন এইসব মামলা, কোর্ট কিছু নেই, তাহলে কারও সাধ্য নেই কিছু করার। কিছু আটকানোর। কারণ সাধারণ মানুষ এখন পরিস্থিতি বুঝে গেছেন।
২৪ ঘণ্টা- ২০১৬-এ যদি আপনারা ফেরেন তাহলে...
বুদ্ধদেব- ২০১৬-র বিষয়ে আমি এখন কিছু বলতে চাই না।
২৪ ঘণ্টা- এতদিন আপনি চুপ ছিলেন কেন?
বুদ্ধদেব- দেখুন নির্বাচনে হারের পর হইহই করে রাস্তায় নেমে পড়ব এমনটা আমি বিশ্বাস করি না। মানুষ এসব ভালভাবে নেয় না। আমার দল ঠিক সময়ই প্রতিবাদ শুরু করেছে। তাতে আমি সামিল হয়েছি।
২৪ ঘণ্টা- যে যাদবপুরের জন্য জন্য এত পরিশ্রম করেছিলেন সেই কেন্দ্রেই ২০১১ বিধানসভা হারটাকে আপনাকে খুব দুঃখ দিয়েছিল?
বুদ্ধদেব- দেখুন আমি নিজেকে নিয়ে এত কথা ভাবি না। আমি হারলাম কি জিতলাম সেটা বড় কথা নয়। গোটা রাজ্যে ফলাফলের প্রভাব যাদবপুরে পড়েছিল।
২৪ ঘণ্টা- (এসএমএসে আসা প্রশ্নের ভিত্তিতে) ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে কি আপনি আবার যাদবপুর কেন্দ্র থেকে দাঁড়াবেন?
বুদ্ধদেব- ২০১৬ এখন অনেক দূর। এটা এখন কোনও অ্যাজেন্ডাই নয়।
২৪ ঘণ্টা- নন্দীগ্রামে গুলি চালানোর ঘটনা থেকে ২১ জুলাই। সব ইস্যুতেই এখন আপনি নিশানায়। আপনাকে নাকি জেরা করা হবে। রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্র তো বলেই দিয়েছেন ২১ জুলাই আপনার নির্দেশে গুলি চলেছিল। এই কথাটা প্রমাণ না হলে নাকি উনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন।
বুদ্ধদেব- ও মন্ত্রী না থাকলে কিছু এসে যায় না। এ সব কথার প্রতিক্রিয়া দেব না। নিশানার কথা বলছেন, ওটা তো স্বাভাবিক। আমাদের পার্টি কর্মীদের ওপর রাজ্যজুড়ে আক্রমণ চলছে, আর আমাদের মত শীর্ষ নেতৃত্বের নেতাদের নিশানা করা হচ্ছে। তা ছাড়া জেরা কে কাকে করবে? নন্দীগ্রামে মাওবাদীদের সঙ্গে তৃণমূলের আঁতাতটা নিয়ে আগে প্রকাশ্যে জানানো হোক। কী না হয়েছে ওখানে। রাস্তা কাটা হয়েছে, গাছ ফেলে দেওয়া হয়েছে, পুলিস কর্মীদের ওপর আক্রমণ হয়েছে, ওসিকে মারা হয়েছিল। নন্দীগ্রামে পুলিস তো জমি নিতে যায়নি, গিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে। তবে গুলিটা না চললেই ভাল হত। কারা হিংসা করল সেটা আগে দেখা হোক।
২৪ ঘণ্টা- শিল্প প্রসঙ্গ যদি বাদ দেওয়া হয় তাহলে আপনার মনে হয় না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়েনর বিষয়টা অনেক সমবেদনশীলভাবে দেখছেন?
বুদ্ধদেব- মন্দির, মসজিদ, চার্চ চিরকাল ধর্মপ্রাণ মানুষদের দিয়ে চলেছে। উনি হঠাত্ ওখানে হাত দিতে গেলেন কেন? ইমামদের ভাতা দিচ্ছেন উনি। কর্মসংস্থানে জোর দিতে হবে। ভাতা দিয়ে হয় না। আমাদের সময় রাইটার্সে ১০০ জন চাকরি পেলে তারমধ্যে ১০ জন মুসলমান চাকরি পেতেন। উনি যা করছেন তাতে শুধু অর্ডার বাতিল হচ্ছে।
২৪ ঘণ্টা- এগুলো কথার কথা বলছেন। কিন্তু সংখ্যালঘু বিষয়টা সংবেদনশীল। উত্তরপ্রদেশ, বিহারেও আমরা দেখেছি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সভায় পোশাকের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়।
বুদ্ধদেব- এটা কোনও ধর্মনিরপেক্ষতার পরিচয় নয়। আমি কোনও একটা ধর্মের মানুষদের সঙ্গে এটা করছি মানে আমি অন্যান্য ধর্মের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করছি। এটা এক ধরণের বিচ্যুতি। আমাদের রাজ্যে এটা আমরা চাই না।
২৪ ঘণ্টা- এর মধ্যে কি কোনও বিপদের গন্ধ রয়েছে?
বুদ্ধদেব- অবশ্যই রয়েছে। আপনি যা নন তা আপনি করছেন। আপনি নামাজ পড়তে জানেন না আপনি নামাজ পড়ছেন। আপনি মাথায় চাদর দিতে জানি না আমি দিচ্ছি। এটা এক ধরণের ভন্ডামি, কৃত্রিমতা।
২৪ ঘণ্টা- বিজেপি আপনাদের চিরকালীন শত্রু। কিন্তু বিজেপির উত্থান, শক্তিবৃদ্ধি, কংগ্রেসের সঙ্গে মতভেদ ২০১৪-তে যাতে সেই শত্রু ক্ষমতায় না আসে তার জন্য কী এখন সময় এসেছে কংগ্রেসের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক ঝালিয়ে নেওয়ার?
বুদ্ধদেব- সেই সময় এখন নয়। আগেও বলেছি কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের মতভেদ মৌলিক। বিজেপির উত্থানতো এই সেদিন হল মন্দির, মসজিদ ভেঙে। ২০০৪ সালে যখন মনমোহন সিং-অটল বিহারী বাজপেয়ীর মধ্যে বেছে নিতে হয়েছিল তখন আমরা কংগ্রেসকে বেছে নিয়েছিলাম। কারণ কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্য অর্থনীতিতে। বিজেপির সঙ্গে অর্থনীতির সঙ্গে রয়েছে সাম্প্রদায়িকতা।
২৪ ঘণ্টা- নতুন সরকারের বয়স হয়েছে। আপনাদেরই মধ্যে কিছু লোক বলছে যে আপনাদের দলে যেসব অশুদ্ধি ঢুকছিল, মানে বেনোজলের স্রোত যারা হুড় হুড় করে ওদিকে গিয়েছিল তারা বুঝতে পেরেছ এ সরকারে থেকে লাভ নেই। তারা আবার ফিরে আসছে। এতে কি আপনাদের শুদ্ধিকরণে কোথাও ব্যাঘাত ঘটছে?
বুদ্ধদেব- শুদ্ধিকরণ সহজ পথে হবে না। এত বড় দল, আমাদের প্রতিটা জেলা, অঞ্চল সবকিছু ধরে ধরে এগোতে হবে। জেলা কমিটি, স্টেট কমিটি প্রতিটা কমিটিকে এই শুদ্ধিকরণের কাজ করতে হবে। এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া।
২৪ ঘণ্টা- আপনাকে ফেসবুকে একজন দর্শক প্রশ্ন পাঠিয়েছেন, যে আপনারা বলছেন শুদ্ধিকরণ চলছে। কিন্তু বাস্তব এটাই যে এখনও আপনাদের দলে অনেক অসত্ মুখ দেখা যাচ্ছে। ফেসবুকে রাজা আপনাকে এই প্রশ্ন পাঠিয়েছেন।
বুদ্ধদেব- সারা রাজ্যে অডিট চলছে। শুদ্ধিকরণের কাজ অনেকটা এগিয়েছে। সবটা এখনও হয়নি। ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। যেমন প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা কিছু নতুন নিয়ম এনেছি। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রথম শর্ত হবে তার গ্রহণযোগ্যতা। মানুষের কাছে তার ভাবমূর্তি কীরকম। যদি দেখা যায় প্রার্থী দারুন কাজ করেন কিন্তু তার গ্রহনযোগ্যতা নেই তাহলে তাকে প্রার্থী করা যাবে না। এগুলো করা হচ্ছে যাতে বেনোজল না থাকে। গ্রহণযোগ্যতা সবার প্রথম। বয়স, অন্যান্য বিষয় তার পর আসবে।
২৪ ঘণ্টা- তাহলে কি বলছেন ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়?
বুদ্ধদেব- এত বড় পার্টিতে কটাই বা এরকম লোক আছেন।
২৪ ঘণ্টা- এই ব্যাপার নাগরিক সমাজে কিছু ক্ষোভ থাকলেও গ্রামে সেভাবে প্রভাব পড়েনি। গ্রামের মানুষ এখনও সেভাবে স্থানীয় নেতাদের ঔদ্ধত্য মুক্ত নয়।
বুদ্ধদেব- শহর, গ্রাম, দাম্ভিকতা সব নিজের জায়গায় রয়েছে। গ্রাম পরিস্থিতিটা একটু জটিল। যেটা আমাদের খেয়ালে এসেছে যে যারা গ্রামের আসল ক্ষেতমজুর, গরীর কৃষক তাদের মধ্যে কিন্তু এই সমস্যটা নেই। এই সমস্যাটা তৈরি হয়েছে গঞ্জ এলাকায়। যেখানে মহাজনী ঋণ এই জাতীয় বিষয়গুলো ঢুকে পড়েছে। তাদের নিয়েই সমস্যা।
২৪ ঘণ্টা- অনেকেই বলেন, সিপিআইএম স্কুলের শ্রেষ্ঠ ছাত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়...
বুদ্ধদেব- ভাল ছাত্র-ছাত্রীদের সবচেয়ে ভাল গুণ কী জানেন? অন্যের ভাল গুণগুলো অনুকরণ করাই ভাল ছাত্রীর লক্ষণ, খারাপ গুণগুলো এড়িয়ে যেতে হয়। তিনি কি পেরেছেন আমাদের ভালগুণগুলো আয়ত্ত করতে। আমাদের দল যা করে গোটা দেশে উদাহরণ তৈরি করেছে সেটা থেকে শিখে রাজ্যকে উপরে নিয়ে যেতে পেরেছেন? এই যে ধান উত্পাদেন আমাদের রাজ্য সবার উপরে গিয়ে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে, আর উনি একই জিনিসে রাজ্যকে পিছিয়ে দিচ্ছেন! মমতা যোগ্য ছাত্রী নন। আসলে উনি বাজে ছাত্রী।
২৪ ঘণ্টা- এবার আপনাকে প্রশ্ন করবেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক দীব্যেন্দু পালিত।
দীব্যেন্দু পালিত- নতুন কিছু লিখছেন কি? নাকি রাজনৈতিক চাপে আর সময় পাচ্ছেন না।
বুদ্ধদেব- আপনি ভাল থাকবেন। আসলে সত্যি এখন ক'দিন লিখতে পারিনি। ঠিকই বলেছেন রাজনৈতিক চাপ এত বেশি যে লেখালিখির সময় পাচ্ছি না। দু'টো জিনিস একসঙ্গে হয় না। আসলে চালাকি করে কোনও সত্ কাজ হয় না।
২৪ ঘণ্টা- তাহলে আপনার লেখালেখি সম্পূর্ণ বন্ধ?
বুদ্ধদেব- হ্যাঁ। তবে রাতে বই পড়ি। কিন্তু লিখতে পারছি না। আসলে ফাঁকি দিয়ে কোনও কাজ হয় না।
২৪ ঘণ্টা- এবার আপনাকে প্রশ্ন করবেন বিশিষ্ট লেখিকা নবনীতা দেবসেন
নবনীতা দেবসেন- এখন তো বইমেলা চলছে। মনে পড়ছে বইমেলায় সেই আগুন লাগার পরদিন আমরা সবাই মিলে রাস্তায় হেঁটেছিলাম তাতে আপনিও ছিলেন। আচ্ছা আপনি কি এবার বইমেলায় গেছেন?
বুদ্ধদেব- না এখনও বইমেলা যায়নি। বইমেলায় আগুন লাগার ঘটনাটা সত্যিই ভয়ঙ্কর। আপনি ভাল থাকুন।
২৪ ঘণ্টা- এবার আপনাকে প্রশ্ন করবেন আপনার বন্ধু অভিজিত্ মুখোপাধ্যায়?
অভিজিত্ মুখোপাধ্যায়- আচ্ছা যে স্বপ্ন নিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলে, ৬০ দশকে যে স্বপ্নটার কথা খুব বলতে মানে সাম্যবাদ, সমাজকে বদলে ফেলা... এসব কি এতদিন রাজনীতি করার পর, ক্ষমতায় থাকার পর কিছুটা হলেও কি তুমি পারলে?
বুদ্ধদেব- ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকে আমরা যা করলাম, তার মূল্যায়ন করার চেষ্টা করছি আমরা।
২৪ ঘণ্টা- আপনারা যেহেতু রাজনীতির মানুষ তাই বন্ধুদের সঙ্গে গুরুগম্ভীর বিষয় ছাড়া আলোচনা করেন না
বুদ্ধদেব- (হেসে) না না, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে এখনও অনেক হালকা বিষয়ে নিয়ে হাসিঠাট্টা করি।
২৪ ঘণ্টা- দার্জিলিং আমাদের রাজ্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এমন কথা তো মুখ্যমন্ত্রী বলছেন। সেদিক থেকে দেখতে গেলে তো আপনাদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ট্যান্ড এক?
বুদ্ধদেব- মিল আছে আবার পার্থক্যও আছে। সুভাষ ঘিসিংয়ের সঙ্গে আমরা যখন চুক্তি করেছিলাম তখন কোথাও পৃথক রাজ্য গড়ার দাবি ছিল না। কিন্তু এখন তো এসব উঠছে। আসলে বিষয়টা হল সমস্যাটা না বুঝেই কাজ করা হচ্ছে। পাহাড় সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হতে হবে।
২৪ ঘণ্টা- কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তো বলছেন, পাহাড় হাসছে!
বুদ্ধদেব- আমাদের সময়ে ১৫-২০ বছর তো মানুষ পাহাড়ে ঘুরতে গেছে। তখন তো কোনও সমস্যা ছিল না।
২৪ ঘণ্টা- আপনি এখন বিরোধী দলে তাই সব ইস্যুতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বলবেন সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এবার বলুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাল দিক কোনটা। মুখ্যমন্ত্রী কিছু তো ভাল করেছেন। আপনাকে একটা কিউ ধরিয়ে দিই। অনেকে বলেন উনি সততার প্রতীক। আপনি কী বলবেন?
বুদ্ধদেব- আমি ভিন্নমত পোষণ করছি। মমতা সততার প্রতীক আমি মানি না।
২৪ ঘণ্টা- কেন? তার কী কোনও কারণ রয়েছে?
বুদ্ধদেব- আপনারা তদন্ত করুন। তাঁর পরিবারের কী অবস্থান ছিল, এখন কী অবস্থান হয়েছে। তার তদন্ত হোক। আমার মাপকাঠিতে ওনাকে সততার স্থানে ওনাকে রাখতে পারছি না। সেটা আজ আর গোপন নেই। সেটা ওঁর কাছের মানুষরাও জানেন।
২৪ ঘণ্টা- এটা তো গুরুতর অভিযোগ। আপনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, পলিটব্যুরো সদস্য। এই অভিযোগটা তো মারাত্মক
বুদ্ধদেব- মমতা সত্ হলে আমি খুশি হতাম।
২৪ ঘণ্টা- মমতার সততা নিয়ে আপনি যে কথাগুলো বললেন সেটার বিষয়ে আরও পরিষ্কার করে বলবেন
বুদ্ধদেব- আপনার তদন্ত করুন সব জানতে পারবেন
২৪ ঘণ্টা- পঞ্চায়েত ভোটের জন্য আপনারা কতটা প্রস্তুত? আপনার নাকি প্রার্থীই খুঁজে পাচ্ছেন না।
বুদ্ধদেব- সমস্যা আছে। বেশ কিছু জেলায় আমাদের দলের স্বাভাবিককাজ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। এতে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। তবে মানুষ ওদের আসল রূপটা বুঝতে পারছে। সব দেখে আমাদের পাশে মানুষ ফিরে আসছে।
২৪ ঘণ্টা-- পঞ্চায়েত নির্বাচন কতটা কঠিন?
বুদ্ধদেব-- চিন্তার বিষয়, সাধারণ মানুষের রায় দিতে যেতে দেবে না। মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করে মানুষকে ভোট দিতে বাধা দেওয়া হবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এটাকেই সামাল দিতে হবে।
২৪ ঘণ্টা--সূর্যকান্ত মিশ্র কি দলের চমকপ্রদ আবিষ্কার?
বুদ্ধদেব--কাজ করতে করতে পরিস্থিতি মানুষকে তৈরি করে।
২৪ ঘণ্টা--নির্বাচনে দলের প্রধান মুখ কি আপনি?
বুদ্ধদেব- প্রধান মুখ তো আপনারা ঠিক করবেন। কয়েকটা মুখ, কয়েকটি মাথা নিয়ে সবটা ঠিক করতে হয়।
২৪ ঘণ্টা-- আপনার দলের নেতৃত্বে তরুণ মুখের অভাব...
বুদ্ধদেব-- সেটা একটা সমস্যা। আমরা নতুন মুখ আনার চেষ্টা করছি। যাঁরা একটু কথা বলতে পারেন। আমরা বুঝতে পারছি। কিছু বাধা রয়েছে। দলীয় রীতি-প্রথা মেনে চটজলদি সমস্যার সমাধান করা যাবে না। সেটা আমরা বুঝতে পারছি।
২৪ ঘণ্টা- মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপধ্যায় সম্পর্কে রেটিং কী? আপনাকে যদি নম্বর দিতে বলা হয় তাহলে ১০-এ কত দেবেন?
বুদ্ধদেব- আমি কিছু দিতে পারছি না।
২৪ ঘণ্টা- তার মানে শূন্য দেবেন?
বুদ্ধদেব- হুঁ, একেবারে শূন্য
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 1
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 2
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 3
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 4
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 5
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 6
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 7
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 8
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 9
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 10
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 11
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 12
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 13
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 14
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 15
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 16
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 17
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 18
বুদ্ধদেব- আমরা ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার রাজ্যে কিছু বিনিয়োগ হয়নি। শিল্পপতি মহলে আমাদের রাজ্যকে নিয়ে হাসিহাসি হচ্ছে। বাইরের রাজ্যে এখন আমার ঠাট্টার পাত্র হয়ে যাচ্ছি।
২৪ ঘণ্টা- আপনাদের দল এই প্রশ্নটা তোলেন বলেই মুখ্যমন্ত্রী কর্মসংস্থান তৈরির ওপর জোর দিচ্ছেন?
বুদ্ধদেব- দৈনিক ভিত্তিতে কিছু মানুষকে এটাই যদি চাকরি দেওয়ার পথ হয় তাহলে সর্বনাশ।
২৪ ঘণ্টা- তার মনে আপনি মনে করেন কর্মসংস্থান তৈরি করতে হলে শিল্প ছাড়া পথ নেই?
বুদ্ধদেব- না। উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা কৃষির ভূমিকা কখনই অস্বীকার করতে পারি না। ক্ষমতা আসার প্রথম ১৫-২০ বছর আমরা শুধু কৃষির ওপর জোর দিয়েছি। ১৯৯০-৯২ সালে যখন শিল্প নীতির পরিবর্তন হল তখন আমাদের কাছে সুযোগ এল। সুযোগের পুরোপুরি সদব্যবহার করার জন্য আমাদের নীতি পাল্টানোর প্রয়োজন হল তখন। আমরা বিনিয়োগ আনতেও সফল হয়েছিলাম। ২০০৬ থেকে রাজ্যে সমস্য শুরু হল। তারপর ২০০৬, ২০০৭, ২০০৮, ২০০৯, ২০১০ এই পাঁচ বছর কি রাজ্যে বিনিয়োগ আসেনি? ২০১০ সালে রাজ্যে ১০,০০০ হাজার কোটির বিনিয়োগ এসেছিল। কৃষির সাফল্য অক্ষুণ্ণ রেখেই আমাদের শিল্প আনতে হবে।
২৪ ঘণ্টা- এখন শিল্পের ক্ষেত্রে সমস্যাটা ঠিক কোথায়?
বুদ্ধদেব- এখন সবথেকে বড় সমস্যা হচ্ছে দিশা অন্ধকার। কেন শিল্প চাই, কীভাবে চাই সেই সম্পর্কে কোনও ধারনা নেই। কলেজ, ইউনিভার্সিটি, পলিটেকনিক, ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প বললেই হয় না। রাজ্যে বড় শিল্প না হলে কখনই ছোট শিল্প হবে না। পেট্রোলিয়াম, অটোমোবাইলের মতো বড় শিল্প হলে তবেই ছোট শিল্প আসবে। আর একটা হল নলেজ ইন্ডাস্ট্রি। কৃষির সাফল্যতে আঘাত না দিয়েই সম্মতি আনতে হবে। জমির সঠিক দাম দিতে হবে ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সম্মতি, জমির দাম ও পুনর্বাসন এই তিনটি জিনস একসঙ্গে নিয়েই দিশা ঠিক করতে হবে। বাংলায় দুটোই শিল্প রয়েছে। চারুশিল্প আর ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু নতুন সরকারের কাছে এই দুটোর কোনও পার্থক্য নেই।
২৪ ঘণ্টা- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু বারংবার জমিনীতি ও শিল্পপ্রসঙ্গে সরকারের অবস্থান আলাদা করে দিচ্ছেন...
বুদ্ধদেব- উনি বলছেন কৃষকদের কাছে গিয়ে জমি কিনবেন। কিন্তু কীভাবে কিনবেন? ইন্ডাস্ট্রি করতে চান, কিন্তু কীভাবে জমি কিনবেন সেই বিষয়ে কোনও দিশা নেই। কেন ৪০০ একর দেওয়া যায় না, তা নিয়ে ধারনা নেই। সিঙ্গুরে টাটার সঙ্গে ৫৬টি অ্যান্সিলারি সংস্থা এসেছিল। যারা গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরি করবে। সেই কথা আমি যখন বলতে গেলাম উনি বলেছিলেন ওখানে শুধুই ওয়াইন শপ আর বিউটি পার্লার তৈরি হবে। কিন্তু এই ৫৬টি সংস্থা যে এসেছিল তারা থাকলে কিন্তু টাটার পরেও আরও অনেক সংস্থা আসত। গুজরাটে যেহেতু ইন্ডাস্ট্রি হয়েছে তাই টাটার পরই ফোর্ড চলে এসেছে। আমার এ রাজ্যে শিল্পের জন্য ১০০০ একর জমি লাগলেই কৃষকের কাছে চলে যাব সেটা কখনই হয় না।
২৪ ঘণ্টা- আপনার কি মনে হয় যেহেতু এই জমিনীতি প্রসঙ্গেই আগের সরকারের হাত পুড়েছে তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি অধিগ্রহণের ওপরই বারবার জোর দিচ্ছেন?
বুদ্ধদেব- ঠিক। সেই কারণেই আমরা পরাজিত হয়েছি। সিঙ্গুর থেকে শুরু হয়ে এমন একটা রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি করা হল যেখান থেকে আমাদের পরাজয় হল।
২৪ ঘণ্টা- এই মুহূর্তে আপনি যদি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতেন তাহলে সবকিছু মাথায় রেখে রাজ্যে শিল্প আনতেন?
বুদ্ধদেব- আমি সিঙ্গুরে আর যাব না। কারণ ওখানে অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছে। কোর্ট, আন্দোলন সব মিলিয়ে। কিন্তু অবশ্যই শিল্প আনব। জাহাজ নির্মান শিল্প আমরাই এনেছিলাম। উড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশে, গুজরাটে শিল্প হলে এখানে কেন হবে না। পেট্রোকেমিক্যালস ইন্ডাস্ট্রি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমি আরও অনেক সতর্ক ভাবে কাজ করব। বড়জোড়া, রঘুনাথপুর, নৈহাটি, পানাগড়ে ৪০০০ একর জমি মানুষ স্বেচ্ছায় দিয়েছে।
২৪ ঘণ্টা- এখন যদি ২০০৬ সালের ফিরে যান তাহলে কি সিঙ্গুর মডেল ছিঁড়ে ফেলে দেবেন?
বুদ্ধদেব- না। আমি সতর্ক ভাবে কাজ করব। এখন সারা দেশে সঙ্কট। আমাদের দেশের জিডিপিও ৮ থেকে ৫-এ নেমে এসেছে। উড়িষ্যা, অন্ধ্র, গুজরাট এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলায় হবে না কেন। সিঙ্গুরে আমি ৮৫% শতাংশ কাজ করে ফেলেছিলাম। সিঙ্গুর কৃষি থেকে কী লাভ করছে? শিল্প হলে কতটা লাভ করত? সবটাই আমরা হিসেব করে এগিয়েছিলাম। এবারেও সেভাবেই সেগুলো মাথায় রেখেই কৃষি থেকে শিল্পে রূপান্তেরর পথে হাঁটব।
২৪ ঘণ্টা- এখন সিঙ্গুরে যা পরিস্থিতি যে সিঙ্গুর কাঁদছে। আপনি কি বলবেন সিঙ্গুর কাঁদলে আপনার দায় নেই? অনেকেই মনে করেন আপনি তো শিল্প আনতে চেয়েছিলে। তাহলে সেই সেই আন্দোলনের পর আপনি কেন কঠোর হলেন না? মানুষের কল্যাণের খাতিরে কি আপনার কঠোর হওয়া প্রয়োজন ছিল না?
বুদ্ধদেব- আমি শুনেছি। পুরোটার একটা ঘটনা পরম্পরা রয়েছে। আমি বহুবার তৃণমূলকে সিঙ্গুরে ঢুকতে দিইনি। ডানকুনি থেকেই ফিরিয়ে দিয়েছি। তারই ফলস্বরূপ কেন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না এই কারণে বিধানসভায় লন্ডভন্ড হয়ে গেল। হাতে সংবিধান নিয়ে বিধানসভায় লন্ডভন্ড চলল। এটা তো ইতিহাস। আমি ভেবেছিলাম সিঙ্গুরে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ কাজ করে ফেলেছি বাকিটা হয়ে যাবে। কিন্তু মাঝখানে নন্দীগ্রাম ঘটে গেল। আমরা পরিষ্কার বলেছিলাম জমি নেব না। তাও নন্দীগ্রাম ভয়ঙ্কর আকার নিল। মাওবাদীরা ছিল বলেই এত ভয়ঙ্কর আকার নিতে পেরেছিল। পরিস্থিতি আরও জটিল হতে থাকল। আমি টাটাকে বললাম। উনি বলেছিলেন পরোয়া করেন না। কারখানা হলে ৪০০০ থেকে ১০,০০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু শেষের দিকে বিক্ষোভ যখন আরও বড় আকার নিল তখন টাটা পাল্টি খেল। উনি আমাকে বললেন এই অবস্থায় থাকলে শিল্প সম্ভব নয়। আমি বললাম আপনাকে কথা দিয়েছি যখন কারখানা হবেই। কিন্তু টাটার সাহস ছিল না। হঠাত্ শারদীয়া উত্সবের আগে টাটা সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিলেন। আমি শক্ত হাতে ওনাকে নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেম। কিন্তু উনি আমাকে বলেছিলেন আমি 'আনওয়ান্টেড গেস্ট', অবাঞ্ছিত অতিথি হিসেবে থাকতে চাই না।
২৪ ঘণ্টা- আবার সেই অবস্থায় ফিরে যান তাহলে অবস্থান মঞ্চ হতে দেবেন?
বুদ্ধদেব- যদি ভাবেন এইসব মামলা, কোর্ট কিছু নেই, তাহলে কারও সাধ্য নেই কিছু করার। কিছু আটকানোর। কারণ সাধারণ মানুষ এখন পরিস্থিতি বুঝে গেছেন।
২৪ ঘণ্টা- ২০১৬-এ যদি আপনারা ফেরেন তাহলে...
বুদ্ধদেব- ২০১৬-র বিষয়ে আমি এখন কিছু বলতে চাই না।
২৪ ঘণ্টা- এতদিন আপনি চুপ ছিলেন কেন?
বুদ্ধদেব- দেখুন নির্বাচনে হারের পর হইহই করে রাস্তায় নেমে পড়ব এমনটা আমি বিশ্বাস করি না। মানুষ এসব ভালভাবে নেয় না। আমার দল ঠিক সময়ই প্রতিবাদ শুরু করেছে। তাতে আমি সামিল হয়েছি।
২৪ ঘণ্টা- যে যাদবপুরের জন্য জন্য এত পরিশ্রম করেছিলেন সেই কেন্দ্রেই ২০১১ বিধানসভা হারটাকে আপনাকে খুব দুঃখ দিয়েছিল?
বুদ্ধদেব- দেখুন আমি নিজেকে নিয়ে এত কথা ভাবি না। আমি হারলাম কি জিতলাম সেটা বড় কথা নয়। গোটা রাজ্যে ফলাফলের প্রভাব যাদবপুরে পড়েছিল।
২৪ ঘণ্টা- (এসএমএসে আসা প্রশ্নের ভিত্তিতে) ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে কি আপনি আবার যাদবপুর কেন্দ্র থেকে দাঁড়াবেন?
বুদ্ধদেব- ২০১৬ এখন অনেক দূর। এটা এখন কোনও অ্যাজেন্ডাই নয়।
২৪ ঘণ্টা- নন্দীগ্রামে গুলি চালানোর ঘটনা থেকে ২১ জুলাই। সব ইস্যুতেই এখন আপনি নিশানায়। আপনাকে নাকি জেরা করা হবে। রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্র তো বলেই দিয়েছেন ২১ জুলাই আপনার নির্দেশে গুলি চলেছিল। এই কথাটা প্রমাণ না হলে নাকি উনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন।
বুদ্ধদেব- ও মন্ত্রী না থাকলে কিছু এসে যায় না। এ সব কথার প্রতিক্রিয়া দেব না। নিশানার কথা বলছেন, ওটা তো স্বাভাবিক। আমাদের পার্টি কর্মীদের ওপর রাজ্যজুড়ে আক্রমণ চলছে, আর আমাদের মত শীর্ষ নেতৃত্বের নেতাদের নিশানা করা হচ্ছে। তা ছাড়া জেরা কে কাকে করবে? নন্দীগ্রামে মাওবাদীদের সঙ্গে তৃণমূলের আঁতাতটা নিয়ে আগে প্রকাশ্যে জানানো হোক। কী না হয়েছে ওখানে। রাস্তা কাটা হয়েছে, গাছ ফেলে দেওয়া হয়েছে, পুলিস কর্মীদের ওপর আক্রমণ হয়েছে, ওসিকে মারা হয়েছিল। নন্দীগ্রামে পুলিস তো জমি নিতে যায়নি, গিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে। তবে গুলিটা না চললেই ভাল হত। কারা হিংসা করল সেটা আগে দেখা হোক।
২৪ ঘণ্টা- শিল্প প্রসঙ্গ যদি বাদ দেওয়া হয় তাহলে আপনার মনে হয় না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়েনর বিষয়টা অনেক সমবেদনশীলভাবে দেখছেন?
বুদ্ধদেব- মন্দির, মসজিদ, চার্চ চিরকাল ধর্মপ্রাণ মানুষদের দিয়ে চলেছে। উনি হঠাত্ ওখানে হাত দিতে গেলেন কেন? ইমামদের ভাতা দিচ্ছেন উনি। কর্মসংস্থানে জোর দিতে হবে। ভাতা দিয়ে হয় না। আমাদের সময় রাইটার্সে ১০০ জন চাকরি পেলে তারমধ্যে ১০ জন মুসলমান চাকরি পেতেন। উনি যা করছেন তাতে শুধু অর্ডার বাতিল হচ্ছে।
২৪ ঘণ্টা- এগুলো কথার কথা বলছেন। কিন্তু সংখ্যালঘু বিষয়টা সংবেদনশীল। উত্তরপ্রদেশ, বিহারেও আমরা দেখেছি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সভায় পোশাকের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়।
বুদ্ধদেব- এটা কোনও ধর্মনিরপেক্ষতার পরিচয় নয়। আমি কোনও একটা ধর্মের মানুষদের সঙ্গে এটা করছি মানে আমি অন্যান্য ধর্মের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করছি। এটা এক ধরণের বিচ্যুতি। আমাদের রাজ্যে এটা আমরা চাই না।
২৪ ঘণ্টা- এর মধ্যে কি কোনও বিপদের গন্ধ রয়েছে?
বুদ্ধদেব- অবশ্যই রয়েছে। আপনি যা নন তা আপনি করছেন। আপনি নামাজ পড়তে জানেন না আপনি নামাজ পড়ছেন। আপনি মাথায় চাদর দিতে জানি না আমি দিচ্ছি। এটা এক ধরণের ভন্ডামি, কৃত্রিমতা।
২৪ ঘণ্টা- বিজেপি আপনাদের চিরকালীন শত্রু। কিন্তু বিজেপির উত্থান, শক্তিবৃদ্ধি, কংগ্রেসের সঙ্গে মতভেদ ২০১৪-তে যাতে সেই শত্রু ক্ষমতায় না আসে তার জন্য কী এখন সময় এসেছে কংগ্রেসের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক ঝালিয়ে নেওয়ার?
বুদ্ধদেব- সেই সময় এখন নয়। আগেও বলেছি কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের মতভেদ মৌলিক। বিজেপির উত্থানতো এই সেদিন হল মন্দির, মসজিদ ভেঙে। ২০০৪ সালে যখন মনমোহন সিং-অটল বিহারী বাজপেয়ীর মধ্যে বেছে নিতে হয়েছিল তখন আমরা কংগ্রেসকে বেছে নিয়েছিলাম। কারণ কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্য অর্থনীতিতে। বিজেপির সঙ্গে অর্থনীতির সঙ্গে রয়েছে সাম্প্রদায়িকতা।
২৪ ঘণ্টা- নতুন সরকারের বয়স হয়েছে। আপনাদেরই মধ্যে কিছু লোক বলছে যে আপনাদের দলে যেসব অশুদ্ধি ঢুকছিল, মানে বেনোজলের স্রোত যারা হুড় হুড় করে ওদিকে গিয়েছিল তারা বুঝতে পেরেছ এ সরকারে থেকে লাভ নেই। তারা আবার ফিরে আসছে। এতে কি আপনাদের শুদ্ধিকরণে কোথাও ব্যাঘাত ঘটছে?
বুদ্ধদেব- শুদ্ধিকরণ সহজ পথে হবে না। এত বড় দল, আমাদের প্রতিটা জেলা, অঞ্চল সবকিছু ধরে ধরে এগোতে হবে। জেলা কমিটি, স্টেট কমিটি প্রতিটা কমিটিকে এই শুদ্ধিকরণের কাজ করতে হবে। এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া।
২৪ ঘণ্টা- আপনাকে ফেসবুকে একজন দর্শক প্রশ্ন পাঠিয়েছেন, যে আপনারা বলছেন শুদ্ধিকরণ চলছে। কিন্তু বাস্তব এটাই যে এখনও আপনাদের দলে অনেক অসত্ মুখ দেখা যাচ্ছে। ফেসবুকে রাজা আপনাকে এই প্রশ্ন পাঠিয়েছেন।
বুদ্ধদেব- সারা রাজ্যে অডিট চলছে। শুদ্ধিকরণের কাজ অনেকটা এগিয়েছে। সবটা এখনও হয়নি। ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। যেমন প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা কিছু নতুন নিয়ম এনেছি। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রথম শর্ত হবে তার গ্রহণযোগ্যতা। মানুষের কাছে তার ভাবমূর্তি কীরকম। যদি দেখা যায় প্রার্থী দারুন কাজ করেন কিন্তু তার গ্রহনযোগ্যতা নেই তাহলে তাকে প্রার্থী করা যাবে না। এগুলো করা হচ্ছে যাতে বেনোজল না থাকে। গ্রহণযোগ্যতা সবার প্রথম। বয়স, অন্যান্য বিষয় তার পর আসবে।
২৪ ঘণ্টা- তাহলে কি বলছেন ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়?
বুদ্ধদেব- এত বড় পার্টিতে কটাই বা এরকম লোক আছেন।
২৪ ঘণ্টা- এই ব্যাপার নাগরিক সমাজে কিছু ক্ষোভ থাকলেও গ্রামে সেভাবে প্রভাব পড়েনি। গ্রামের মানুষ এখনও সেভাবে স্থানীয় নেতাদের ঔদ্ধত্য মুক্ত নয়।
বুদ্ধদেব- শহর, গ্রাম, দাম্ভিকতা সব নিজের জায়গায় রয়েছে। গ্রাম পরিস্থিতিটা একটু জটিল। যেটা আমাদের খেয়ালে এসেছে যে যারা গ্রামের আসল ক্ষেতমজুর, গরীর কৃষক তাদের মধ্যে কিন্তু এই সমস্যটা নেই। এই সমস্যাটা তৈরি হয়েছে গঞ্জ এলাকায়। যেখানে মহাজনী ঋণ এই জাতীয় বিষয়গুলো ঢুকে পড়েছে। তাদের নিয়েই সমস্যা।
২৪ ঘণ্টা- অনেকেই বলেন, সিপিআইএম স্কুলের শ্রেষ্ঠ ছাত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়...
বুদ্ধদেব- ভাল ছাত্র-ছাত্রীদের সবচেয়ে ভাল গুণ কী জানেন? অন্যের ভাল গুণগুলো অনুকরণ করাই ভাল ছাত্রীর লক্ষণ, খারাপ গুণগুলো এড়িয়ে যেতে হয়। তিনি কি পেরেছেন আমাদের ভালগুণগুলো আয়ত্ত করতে। আমাদের দল যা করে গোটা দেশে উদাহরণ তৈরি করেছে সেটা থেকে শিখে রাজ্যকে উপরে নিয়ে যেতে পেরেছেন? এই যে ধান উত্পাদেন আমাদের রাজ্য সবার উপরে গিয়ে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে, আর উনি একই জিনিসে রাজ্যকে পিছিয়ে দিচ্ছেন! মমতা যোগ্য ছাত্রী নন। আসলে উনি বাজে ছাত্রী।
২৪ ঘণ্টা- এবার আপনাকে প্রশ্ন করবেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক দীব্যেন্দু পালিত।
দীব্যেন্দু পালিত- নতুন কিছু লিখছেন কি? নাকি রাজনৈতিক চাপে আর সময় পাচ্ছেন না।
বুদ্ধদেব- আপনি ভাল থাকবেন। আসলে সত্যি এখন ক'দিন লিখতে পারিনি। ঠিকই বলেছেন রাজনৈতিক চাপ এত বেশি যে লেখালিখির সময় পাচ্ছি না। দু'টো জিনিস একসঙ্গে হয় না। আসলে চালাকি করে কোনও সত্ কাজ হয় না।
২৪ ঘণ্টা- তাহলে আপনার লেখালেখি সম্পূর্ণ বন্ধ?
বুদ্ধদেব- হ্যাঁ। তবে রাতে বই পড়ি। কিন্তু লিখতে পারছি না। আসলে ফাঁকি দিয়ে কোনও কাজ হয় না।
২৪ ঘণ্টা- এবার আপনাকে প্রশ্ন করবেন বিশিষ্ট লেখিকা নবনীতা দেবসেন
নবনীতা দেবসেন- এখন তো বইমেলা চলছে। মনে পড়ছে বইমেলায় সেই আগুন লাগার পরদিন আমরা সবাই মিলে রাস্তায় হেঁটেছিলাম তাতে আপনিও ছিলেন। আচ্ছা আপনি কি এবার বইমেলায় গেছেন?
বুদ্ধদেব- না এখনও বইমেলা যায়নি। বইমেলায় আগুন লাগার ঘটনাটা সত্যিই ভয়ঙ্কর। আপনি ভাল থাকুন।
২৪ ঘণ্টা- এবার আপনাকে প্রশ্ন করবেন আপনার বন্ধু অভিজিত্ মুখোপাধ্যায়?
অভিজিত্ মুখোপাধ্যায়- আচ্ছা যে স্বপ্ন নিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলে, ৬০ দশকে যে স্বপ্নটার কথা খুব বলতে মানে সাম্যবাদ, সমাজকে বদলে ফেলা... এসব কি এতদিন রাজনীতি করার পর, ক্ষমতায় থাকার পর কিছুটা হলেও কি তুমি পারলে?
বুদ্ধদেব- ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকে আমরা যা করলাম, তার মূল্যায়ন করার চেষ্টা করছি আমরা।
২৪ ঘণ্টা- আপনারা যেহেতু রাজনীতির মানুষ তাই বন্ধুদের সঙ্গে গুরুগম্ভীর বিষয় ছাড়া আলোচনা করেন না
বুদ্ধদেব- (হেসে) না না, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে এখনও অনেক হালকা বিষয়ে নিয়ে হাসিঠাট্টা করি।
২৪ ঘণ্টা- দার্জিলিং আমাদের রাজ্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এমন কথা তো মুখ্যমন্ত্রী বলছেন। সেদিক থেকে দেখতে গেলে তো আপনাদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ট্যান্ড এক?
বুদ্ধদেব- মিল আছে আবার পার্থক্যও আছে। সুভাষ ঘিসিংয়ের সঙ্গে আমরা যখন চুক্তি করেছিলাম তখন কোথাও পৃথক রাজ্য গড়ার দাবি ছিল না। কিন্তু এখন তো এসব উঠছে। আসলে বিষয়টা হল সমস্যাটা না বুঝেই কাজ করা হচ্ছে। পাহাড় সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হতে হবে।
২৪ ঘণ্টা- কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তো বলছেন, পাহাড় হাসছে!
বুদ্ধদেব- আমাদের সময়ে ১৫-২০ বছর তো মানুষ পাহাড়ে ঘুরতে গেছে। তখন তো কোনও সমস্যা ছিল না।
২৪ ঘণ্টা- আপনি এখন বিরোধী দলে তাই সব ইস্যুতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বলবেন সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এবার বলুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাল দিক কোনটা। মুখ্যমন্ত্রী কিছু তো ভাল করেছেন। আপনাকে একটা কিউ ধরিয়ে দিই। অনেকে বলেন উনি সততার প্রতীক। আপনি কী বলবেন?
বুদ্ধদেব- আমি ভিন্নমত পোষণ করছি। মমতা সততার প্রতীক আমি মানি না।
২৪ ঘণ্টা- কেন? তার কী কোনও কারণ রয়েছে?
বুদ্ধদেব- আপনারা তদন্ত করুন। তাঁর পরিবারের কী অবস্থান ছিল, এখন কী অবস্থান হয়েছে। তার তদন্ত হোক। আমার মাপকাঠিতে ওনাকে সততার স্থানে ওনাকে রাখতে পারছি না। সেটা আজ আর গোপন নেই। সেটা ওঁর কাছের মানুষরাও জানেন।
২৪ ঘণ্টা- এটা তো গুরুতর অভিযোগ। আপনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, পলিটব্যুরো সদস্য। এই অভিযোগটা তো মারাত্মক
বুদ্ধদেব- মমতা সত্ হলে আমি খুশি হতাম।
২৪ ঘণ্টা- মমতার সততা নিয়ে আপনি যে কথাগুলো বললেন সেটার বিষয়ে আরও পরিষ্কার করে বলবেন
বুদ্ধদেব- আপনার তদন্ত করুন সব জানতে পারবেন
২৪ ঘণ্টা- পঞ্চায়েত ভোটের জন্য আপনারা কতটা প্রস্তুত? আপনার নাকি প্রার্থীই খুঁজে পাচ্ছেন না।
বুদ্ধদেব- সমস্যা আছে। বেশ কিছু জেলায় আমাদের দলের স্বাভাবিককাজ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। এতে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। তবে মানুষ ওদের আসল রূপটা বুঝতে পারছে। সব দেখে আমাদের পাশে মানুষ ফিরে আসছে।
২৪ ঘণ্টা-- পঞ্চায়েত নির্বাচন কতটা কঠিন?
বুদ্ধদেব-- চিন্তার বিষয়, সাধারণ মানুষের রায় দিতে যেতে দেবে না। মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করে মানুষকে ভোট দিতে বাধা দেওয়া হবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এটাকেই সামাল দিতে হবে।
২৪ ঘণ্টা--সূর্যকান্ত মিশ্র কি দলের চমকপ্রদ আবিষ্কার?
বুদ্ধদেব--কাজ করতে করতে পরিস্থিতি মানুষকে তৈরি করে।
২৪ ঘণ্টা--নির্বাচনে দলের প্রধান মুখ কি আপনি?
বুদ্ধদেব- প্রধান মুখ তো আপনারা ঠিক করবেন। কয়েকটা মুখ, কয়েকটি মাথা নিয়ে সবটা ঠিক করতে হয়।
২৪ ঘণ্টা-- আপনার দলের নেতৃত্বে তরুণ মুখের অভাব...
বুদ্ধদেব-- সেটা একটা সমস্যা। আমরা নতুন মুখ আনার চেষ্টা করছি। যাঁরা একটু কথা বলতে পারেন। আমরা বুঝতে পারছি। কিছু বাধা রয়েছে। দলীয় রীতি-প্রথা মেনে চটজলদি সমস্যার সমাধান করা যাবে না। সেটা আমরা বুঝতে পারছি।
২৪ ঘণ্টা- মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপধ্যায় সম্পর্কে রেটিং কী? আপনাকে যদি নম্বর দিতে বলা হয় তাহলে ১০-এ কত দেবেন?
বুদ্ধদেব- আমি কিছু দিতে পারছি না।
২৪ ঘণ্টা- তার মানে শূন্য দেবেন?
বুদ্ধদেব- হুঁ, একেবারে শূন্য
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 1
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 2
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 3
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 4
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 5
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 6
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 7
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 8
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 9
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 10
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 11
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 12
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 13
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 14
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 15
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 16
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 17
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য Live: Part 18